মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় চিরস্মরণীয় ব্যক্তি। বহু জ্ঞানী, গুণী, কবি ও রসিক ব্যক্তির প্রতিপালনের ভার তিনি নিয়েছিলেন নবদ্বীপের হরিরাম তর্কসিদ্ধান্ত, শিবরাম বাচস্পতি, বীরেশ্বর ন্যায়পঞ্চানন, রামরুদ্র বিদ্যানিধি, গুপ্তিপাড়ার বাণেশ্বর বিদ্যালঙ্কার, ত্রিবেণীর জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন, শান্তিপুরের রামমোহন গোস্বামী প্রভৃতি পণ্ডিতগণ তাঁর সভায় স্থান পেয়েছিলেন। তাঁর সভাকবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের নাম বাংলা-সাহিত্যে অমর হয়ে আছে। কৃষ্ণচন্দ্রের আদেশেই ভারতচন্দ্র বিদ্যাসুন্দর রচনা করেন ।
কবি রামপ্রসাদ সেন তাঁরই সভাকবি ছিলেন। নিজে রসিক বলেই গোপাল ভাঁড়, আজু গোঁসাই, হাস্যরাম, মুক্তিরাম প্রভৃতি বিভিন্ন রসিক সজ্জনকে সমাদরে 'আহ্বান করে এনে নদীয়া রাজধানীতে বাস করিয়েছিলেন কৃষ্ণচন্দ্ৰ । । এঁদের ভিতর প্রথমেই নাম করতে হয় গোপালচন্দ্রের, দুই শতাব্দী ধরে গোপাল ভাঁড় নামে যাঁর স্মৃতি বেঁচে রয়েছে বাংলার লোকসমাজে। গোপাল ছিলেন প্রকৃত রসিক ও রসবেত্তা, উপস্থিত বুদ্ধি ছিল তাঁর অসাধারণ, কথায় কেউ তাঁকে ঠকাতে পারত না। প্রাচীন সংস্কৃত-সাহিত্যে রাজসভার বিদূষকদের কিছু- কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। গোপাল ছিলেন সেই জাতীয় বিদূষক। রাজাকে আনন্দ যোগাবার জন্যই তিনি হাস্যরসের সৃষ্টি করতেন—সন্দেহ নেই । কিন্তু তাঁর অনেক সরস উক্তি এক-যুগ পরে আজও বাংলার রাজা, মজুর সকল শ্রেণির লোককে হাসিয়ে মাতিয়ে তোলবার শক্তি রাখে, এটা গোপালের অসাধারণ বাহাদুরির পরিচায়ক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন