শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩

প্রমোদ দাশগুপ্ত'র সঙ্গে সেই দিনগুলি - সুধাংশু দাশগুপ্ত

"জীবন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেই” – লেনিনের এই বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গে সি. পি. আই (এম)-এর জীবনে বাস্তবায়িত করে তুলেছিলেন যিনি সেই কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্তের জীবন প্রদীপ নিভে গেলো ১৯৮২ সালের ২৯শে নভেম্বর চীনের বেইজিং (পিকিং)-এর হাসপাতালে।

মৃত্যুর মধ্য দিয়েও কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্ত পার্টিকে যে নতুন স্তরে উন্নীত করে গেলেন তা স্পষ্ট হয়ে উঠলো সেবছর ডিসেম্বরের ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউণ্ডে তাঁর স্মরণে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসমাবেশে কংগ্রেস (ই), জনতা থেকে শত্রু, করে সর্বদলের, সর্বমানের নেতাদের তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে। পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা ।

আদর্শে'র জন্য সংগ্রামই জীবন—এই মূলমন্ত্র নিয়ে বিশের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে যে বিপ্লবী জীবনের সূচনা সেই বিপ্লবী জীবনের সমাপ্তি ঘটলো আশির দশকের প্রথমার্ধে। বিপ্লবী জীবনের এই দীর্ঘ যাত্রাপথে কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্ত ছিলেন আদর্শে অটল-মতাদর্শের ক্ষেত্রে কোথাও তিনি আপস করেন নি। প্রমোদ দাশগুপ্তের  জীবনকাহিনী সেভাবে চর্চিত হয়নি। ভবিষ্যতে প্রয়োজনবোধে যদি কেউ বা কোনো সংস্থা কমরেড প্রমোদের জীবনকাহিনী লিখতে উদ্যোগী হন তাদের জন্যই কমরেড প্রমোদ সম্বন্ধে লেখকের জানা কিছু তথ্য এই বইতে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। 


শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩

বাংলা লেখার সহজপাঠ - পবিত্র সরকার

বাংলা প্রকাশনার জগৎে সাড়া জাগিয়ে এসেছিল সৃষ্টি প্রকাশন। যে অল্প সময় এই সংস্থার আয়ু ছিল তার মধ্যেই বেশ কিছু মননশীল বই এঁরা পাঠকদের উপহার দেন। এই বইটি তেমনই একটি বই।  এই বই যদিও আগ্রহী ছাত্র ও শিক্ষকদের ভালো বাংলা লেখা শেখার উদ্দেশ্যে প্রণীত।  কিন্তু ছাত্র তো আমরা সকলেই।  মাতৃভাষার মণিমুক্তো সমুদ্রের কতটুকু আয়ত্তে এসেছে যে আর চাইনা বলতে পারি?

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের কলমের গুনে এই বই যথেষ্ট সহজ সরল হয়ে উঠেছে।  বইটি আশাকরি সবার ভালো লাগবে। 

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩

বিপ্লবী গণেশ ঘোষ জন্ম শতবর্ষে প্রবন্ধ সংকলন

কম্যুনিস্ট নেতা বিপ্লবী গণেশ ঘোষের জন্মশতবর্ষ আরম্ভ হয় ২২শে জুন ১৯৯৯। পশ্চিমবঙ্গে তথা বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যুতে শোক ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছিল।

বাংলা দেশের মুক্তিযুদ্ধে মাষ্টারদা সূর্যসেন ও তাঁর সহকর্মীদের নাম উচ্চারিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ থেকে প্রেরণা লাভের কথা স্বীকার করেছেন। ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রামে মাষ্টারদা সূর্য সেনের মূর্তি প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানের আমন্ত্রণে বিপ্লবী গণেশ ঘোষের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী, বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থার সদস্যগণ, বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং ভারতের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের ১৫০জনের এক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের ঢাকা ও চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। ঢাকার ‘বঙ্গভবনে’ বাংলা দেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমান বিপ্লবী গণেশ ঘোষ ও তাঁর সহকর্মীদের সম্বর্দ্ধনা জ্ঞাপন করেছিলেন। সুতরাং প্রকৃত বিপ্লবীর দেশ ভাগ নেই। আয়ারল্যাণ্ডের ডি. ভ্যালেরা ড্রেনবিন যেমন চট্টগ্রাম বিদ্রোহে তথা বাংলার বিপ্লবী যুব সমাজকে প্রেরণা জুগিয়েছেন তেমনই লেনিন, ষ্ট্যালিন বিপ্লবীদের উচ্চ স্তরে উন্নিত করার পথ প্রদর্শক। সুতরাং বিপ্লবী গণেশ ঘোষ সমগ্র ভারতে এবং বাংলাদেশে দেশপ্রেম, ত্যাগ ও সংগ্রামের প্রতীক ।

বিপ্লবী গণেশ ঘোষ জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনের কর্মসূচীর অন্যতম প্রধান বিষয় একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ। স্বাধীনতা সংগ্রামে বিপ্লবী গণেশ ঘোষের আজীবন সংগ্রাম, দেশের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ, দীর্ঘ কারাবাস বরণ, তাঁর অতি সাধারণভাবে ব্যক্তিগত জীবনযাপন ইত্যাদি মূল্যায়ন মূলক এই প্রবন্ধ সংকলন।


শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩

নদীয়ার সমাজচিত্র - মোহিত রায়

স্বনামধন্য আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক মোহিত রায়ের নদীয়া বিষয়ক বইগুলো নদিয়ার ইতিহাস চর্চায় খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ  সংযোজন। এই বইটিতে লেখক পুরোনো চিঠি, অঙ্গীকারপত্র, দলিল দস্তাবেজ থেকে প্রাচীন নদিয়ার সমাজ জীবনকে চিত্রিত করার চেষ্টা করেছেন।  এই ধরণের আঞ্চলিক ইতিহাসের বইগুলি রাজা রাজরার, মহাপুরুষদের অথবা কোনো বড় ঘটনার বর্ণনার বদলে তৃণমূল স্তরের মানুষের কথা বলে।  এমন অনেক নামের উল্লেখ পাওয়া যায় বৃহত্তর ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ভাবে যাদের বিশেষ অবদান নেই।  ইতিহাসের পাতায় তাঁরা কখনোই স্থান পাবেন না কিন্তু এই ধরণের প্রয়াস তাঁদের জীবনকথা পুরোপুরি মুছে যেতে দে না। 


শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০২৩

তুলসী লাহিড়ী - বিজিতকুমার দত্ত

নাটক ও চলচ্চিত্র জগতের যশস্বী ব্যক্তিত্ব তুলসী লাহিড়ীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশের কথা ছিল। বাংলা সাহিত্যের আর একজন গুণী মানুষ প্রয়াত বিজিতকুমার দত্ত অসুস্থ শরীরেও গ্রন্থটি লেখার কাজ শেষ করেছিলেন।

কিছু কিছু অভিধা বহু ব্যবহারে তার মূল দ্যোতনা হারায়। ‘বহুমুখী প্রতিভা' এমনই একটা জৌলুস হারানো বিশেষণ। অপাত্রে অপ্রয়োজনে ব্যবহৃত হতে হতে ক্রমশ ম্রিয়মান এই শব্দবন্ধ প্রকৃত অর্থে যাঁদের নামের আগে প্রযুক্ত হতে পারে তেমনই একজন তুলসী লাহিড়ী। সুরকার - গীতিকার-পরিচালক-নাট্যকার-অভিনেতা তুলসী লাহিড়ী।

শৈশব থেকেই সংগীতের প্রতি তুলসী লাহিড়ীর ঝোঁক ছিল। এর পিছনে মূল প্রেরণা ছিলেন পিতা সুরেন্দ্রচন্দ্র (মতান্তরে, সুরেন্দ্রনাথ)। মঞ্চের সঙ্গে তুলসী লাহিড়ীর প্রথম যোগাযোগের সূত্রও এই সংগীত। ১৯২৮-৩৪ সালের মধ্যে তিনি গ্রামোফোন কোম্পানির জন্য অজস্র গান লেখেন ও সুর দেন। মোটামুটি হিসাবে তুলসীবাবুর প্রায় ২০০টি গান ওই কোম্পানি রেকর্ড করে। তিনি বাংলা খেয়াল, ঠুংরি, পল্লিগীতি, বিজয়া-আগমনী, ভক্তিমূলক গান, কৌতুকগীতি ইত্যাদি লিখেছেন ও সুরারোপ করেছেন। মূলত রাগাশ্রয়ী গানের প্রতি তাঁর টান ছিল। জমিরুদ্দিন খাঁ-র মতো সে সময়ের বিখ্যাত ওস্তাদ গাইয়ে ও বড়ো বড়ো সংগীতবিদ্রা তুলসীবাবুর গুণগ্রাহী ছিলেন ও তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন।

তুলসী লাহিড়ী নাটকের জগতে পাকাপাকিভাবে আসেন ১৯৪০-৪১ সালে। মন্বন্তর আর দেশভাগের বেদনাবহ স্মৃতি তুলসী লাহিড়ীর রচনায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। মনুষ্যত্বের অমর্যাদা তাঁকে পীড়িত করেছে। তাঁর অধিকাংশ নাটকের নাটকের মেরুদণ্ডই  হচ্ছে  --- জীবনযুদ্ধই বেঁচে থাকার ধর্ম।