শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩

পালকি থেকে পাতাল রেল-সন্তোষ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতার পরিবহনের চরিত্র ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এই বইতে। সে ইতিহাস যেমন মজার তেমনই শিক্ষণীয়ও বটে। ধীরে ধীরে কলকাতা যেমন হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে বেড়ে উঠেছে তারই সঙ্গে বদলে গেছে তার পরিবহনেরও চরিত্র। বদলেছে শহর , বদলেছে পথঘাট। 


রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২৩

বহরমপুর পরিচয় - অর্ণব বড়াল

 'মনে হয় কোনো বিলুপ্ত নগরীর কথা 

সেই নগরীর এক ধূসর প্রাসাদের রূপ জাগে হৃদয়ে'

মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুর। বর্তমানে এই শহরটির আয়তন ক্রমবর্ধমান। এই বিস্তীর্ণ জনপদ বা শহরটি কীভাবে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে –তার ধারাবাহিক ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু পাঠকমাত্রই জানতে উদ্‌গ্রীব হবেন। ইতিহাস সাক্ষী শহর হঠাৎ জন্মায় না। দিনে-দিনে, কালে-কালে, যুগে-যুগে গড়ে ওঠে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে - 'Rome was not built in a day.'  শহর বহরমপুরের ক্ষেত্রেও এই সত্য প্রচলিত।



শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২৩

পলাশির অজানা কাহিনী: সুশীল চৌধুরী

 পলাশির ঘটনাবলী ও যুদ্ধ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে এমন একটি বদ্ধমূল ধারণা প্রচলিত আছে যে, সিরাজদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করবার জন্য মীরজাফর, জগৎশেঠ প্রমুখ তখনকার কয়েকজন বণিক-ব্যাঙ্কার-অভিজাত মানুষ চক্রান্ত সাজিয়েছিলেন। পেছন থেকে তাঁদের সাহায্য করেছিল ইংরেজরা। পলাশির পেছনে ইংরেজদের কোনও ‘পূর্বপরিকল্পনা' ছিল না, তাদের বাংলা বিজয় নেহাতই 'আকস্মিক' ঘটনা। এমনকী, অনেক ঐতিহাসিক এও মনে করেন, বাংলার ‘আভ্যন্তরীণ সংকট'-ই ইংরেজদের বাংলায় ডেকে আনে। এই গ্রন্থ কিন্তু ঠিক এর উলটো কথাই বলেছে। পলাশির ষড়যন্ত্র ও প্রাক্-পলাশি ঘটনাবলীর বিশদ ও সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করে এবং ডাচ ও ইংরেজ কোম্পানির নথিপত্র, কোম্পানির কর্মচারীদের লেখা থেকে অসংখ্য তথ্য সংগ্ৰহ করে লেখক সন্দেহাতীতভাবে দেখিয়েছেন যে, পলাশি চক্রান্তের মূল নায়ক ইংরেজরাই। তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও মদত ছাড়া ষড়যন্ত্র ও যুদ্ধ কোনওভাবেই সম্ভব হত না। তারাই একদিকে ভারতীয়দের নানা প্রলোভন ও প্রচ্ছন্ন ভয় দেখিয়ে, অন্যদিকে কাকুতি-মিনতি করে অন্যদের নিজস্ব চতুর ‘পরিকল্পনা'য় সামিল করিয়েছিল। সেই সময় ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য নিদারুণ সংকটে পড়ে যাওয়ায়, কোম্পানির কর্মচারীদের কাছে ছলে-বলে-কৌশলে বঙ্গবিজয় ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না। পলাশির যুদ্ধ তারই পরিণতি। এই গ্রন্থের লেখক পলাশি নিয়ে বহু ধারণাকে অসার প্রমাণিত করেছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন আবিষ্কৃত নতুন তথ্য ও সত্যের।



রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৩

বাংলার লোকক্রীড়া - বরুনকুমার চক্রবর্তী

আমরা খেলা বলতে বুঝি অতি পরিচিত ফুটবল, হকি, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ক্যারম, লুডো, ব্যাগাডুলি, ভলিবল, বাস্কেটবল, রাগবি আরও কত কি ৷ কিন্তু এসব খেলার প্রচার বৈদ্যুতিন মাধ্যম, সংবাদপত্র, সাময়িক পত্রের কারণে যতই হোক না কেন, এখনও গ্রাম বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ নানা খেলায় অংশ নিয়ে থাকে, যেগুলির অধিকাংশই আমাদের কাছে অপরিচিত রয়ে গেছে। কিংবা এগুলি খেলা নামে অভিহিত হবার যোগ্য কিনা সে বিষয়েও সংশয় জাগে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এইসব একান্ত ভাবে দেশীয় খেলা বা আঞ্চলিক খেলাগুলির বিনোদন ক্ষমতা তথাকথিত পরিশীলিত খেলাগুলির তুলনায় এতটুকু কম নয়। বরং পরিশীলিত খেলা নানা কারণেই ব্যয়বহুল, এগুলিতে অংশগ্রহণের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষকের অধীনে নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রয়োজন। এসব খেলা সব সময় সকল স্থানে অনুষ্ঠিত হতে পারে না উপযুক্ত মাঠ বা ক্ষেত্রের অভাবে, উপযুক্ত সাজ সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কারণে। কিন্তু আমাদের লৌকিক খেলাগুলি সেদিক থেকে অনেকখানি বাধা ও নিয়ম মুক্ত। লৌকিক খেলাগুলির বৈচিত্র্য আমাদের বিস্মিত করে। এগুলিতে স্রষ্টাদের কল্পনাশক্তির পরিচয়ে আমরা মুগ্ধ না হয়ে পারি না। সেই সঙ্গে লোকক্রীড়াগুলিতে শিশুদের অবদমিত আকাঙ্ক্ষা মুক্তির পথ পায়। আপাতভাবে যে খেলাগুলি অর্থহীন কিংবা নির্দোষ আনন্দদায়ক বলে মনে হয়, একটু সূক্ষ্ম ভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সেগুলি থেকে আমরা এমন তথ্য পাই যা আমাদের অতীত জীবন সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। লৌকিক ক্রীড়াগুলির অধিকাংশই জীবনের অনুকৃতি সম্বলিত ।


রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৩

সে আর এক কলকাতা - ডঃ অতুল সুর

‘সে আর এক কলকাতা'র লোক একবার জুয়ায় ডুবে গিয়েছিল। সময়টা প্রথম মহাযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) দু-তিন বছর আগের কথা। জুয়াটার নাম “তুলার খেলা'।  সব দোকানের সামনে ঝুলছে একখানা সাইনবোর্ড — মাপে এক হাত চওড়া ও দু হাত খাড়াই। বোর্ডটির মাথায় লেখা 'আমেরিকান কটন ফিগার'। আর তার নিচে দশটা লাইন, প্রত্যেক লাইনের গোড়ায় লেখা আছে যথাক্রমে ওয়ান, টু, থ্রি ইত্যাদি -এক থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যা।

আজ যদি কেউ কোন সংখ্যায় এক আনা পয়সা লাগায় আর সামনে কাল যদি সেই সংখ্যা ওঠে, তা হলে সে কাল আট আনা পয়সা পেত। পয়সা লাগাবার সময় ওরা একটা রসিদ দিত, আর কাল ওই রসিদটা দেখালেই ওরা আট আনা পয়সা দিয়ে দিত।

রাতারাতি কলকাতা শহরে গজিয়ে উঠেছিল হাজার হাজার ‘তুলোর খেলার দোকান। খেলাটা শহরের লোককে এমনভাবে আকৃষ্ট করল যে সারা শহরে জুয়ার বন্যা বয়ে গেল। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। বাড়ির কর্তা খেলেন, গিন্নী খেলেন। বৌ খেলে, মেয়ে খেলে। ছেলে খেলে, জামাই খেলে। রাঁধুনী বামুন খেলে, ঝি-চাকর খেলে। মুটে খেলে, মজুর খেলে। দোকানদার খেলে, ব্যবসাপতি খেলে। এককথায় শহরের সকল শ্রেণী, সম্প্রদায় ও স্তরের লোকই ‘তুলোর খেলায় মত্ত হয়ে উঠল। এমন কী স্কুলের ছেলেরাও মারবেল গুলি নিয়ে ওই খেলা খেলতে শুরু করে দিল।

তুলোর খেলায় যে নম্বরটা উঠত, সেটা আমেরিকার নিউ আরলীস শহরের তুলোর ফাটকা-বাজারের দরের ভিত্তিতে নির্ধারিত হত। তুলোর খেলার যে বোর্ডগুলো দোকানের সামনে টাঙানো থাকত, তাতে এক থেকে দশ নম্বর ছাড়া আরো দু-তিনটি বহু-অঙ্ক-বিশিষ্ট সংখ্যা থাকত। সকলেরই ধান্ধা ছিল ওই সংখ্যাগুলি থেকে পরদিনের নম্বর আবিষ্কার করা।