শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৩

আজকের প্রতিভাস - নদীয়া জেলার মেলা - সম্পাদক শতঞ্জীব রাহা

বাংলাভাষায় ‘মেলা' শব্দটির অর্থগত বিভিন্নতা সত্ত্বেও প্রায় সবকটি বিকল্প অর্থ আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের উদ্দিষ্ট অর্থটির সঙ্গে কোনো-না-কোনোভাবে সমার্থক ও সহায়ক হয়ে ওঠে :

বিশেষ কোনো উৎসব উপলক্ষে কোনো স্থানে বহুমানুষের সমাবেশ, সভা- সমাজ, প্রদর্শনী, স্বল্প সময়ের জন্য কেনাবেচার বাজার, মিলে যাওয়া, মিশে যাওয়া, মিলবিশিষ্ট হওয়া, উন্মীলিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি; কিংবা যাত্রা করা। ‘মেলা’-র সঙ্গে অর্থগুলির একটি ভাবগত তাৎপর্যের সাযুজ্য তৈরি হয়ে যায় । সবক্ষেত্রে যেমন হয়, এখানেও তেমনি, আভিধানিক অর্থ অপেক্ষা এখানে মেলা সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণাই বেশি কার্যকর, সন্দেহ নেই।

‘মেলা’ সামাজিক ক্রিয়ারই ফল। সমাজের যেমন ভিত্তি আছে, মেলারও তেমনি একটি সামাজিক ভিত্তি আছে। একবিংশ শতকে পৌঁছে মেলার সামাজিক ভিত্তিভূমিটির অনুসন্ধানের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয় ৷ একটা সময় পর্যন্ত বাংলার সমস্ত মেলারই পেছনে ছিল ধর্মীয় প্রেরণা । কিন্তু কোনো কালেই মেলার একমাত্র ভিত্তি ধর্ম ছিল না, ছিল অর্থনীতি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের প্রেরণা ও অর্থনীতির চাহিদার বহুলাংশে গোত্রান্তর ঘটেছে। এক সময় গ্রামীণ (এমন-কী মুষ্টিমেয় শহুরে মেলাও) মেলা ছিল বাৎসরিক পণ্য বিপণনের কেন্দ্র। যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতা, চাহিদার স্বল্পতা, দারিদ্র্য, ভোগ্যপণ্য বন্টন-ব্যবস্থার অনুপস্থিতি ইত্যাকার নানান কারণে মেলাই ছিল সাংসারিক, দৈনন্দিন—এমন কী আবশ্যিক পণ্যসংগ্রহের একমাত্র জায়গা।

শনিবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৩

বাংলায় পূজিত নারীদেবতা - রাধারমণ রায়

গ্রামবাংলায় এখনো লৌকিক দেবতার পুজো এবং ব্রত মেয়েরাই বেশি করে থাকে। মনসা, মঙ্গলচণ্ডী আর লক্ষ্মী পুজোর সময় এটা ভালো মতো চোখে পড়ে ৷ তা ছাড়া অন্যান্য দেব-দেবীর পুজোর জোগাড়-যন্তর মেয়েরাই করে থাকেন। এ থেকে অনুমান করা যায়, নারীর হাতেই বাংলার দেব-দেবীর সৃষ্টি ।

শুধু দেব-দেবী নয়, আদিম বাঙালি সমাজে কৃষিরও আবিষ্কার হয় নারীর হাতে। সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগে বাংলায় মাতৃতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। নারীশাসিত সেই সমাজে নারীদেবতার বহুল প্রচলন শুরু হয়েছিল ব্রতকথা, গাছপুজো, ভূমিপুজো ইত্যাদির মাধ্যমে। তবে সে-সব লৌকিক দেবতার পুজো হত স্থানীয় স্তরে, ভিন্ন ভিন্ন নামে। ধীরে ধীরে সেগুলি মূর্তি লাভ করে, আর এ-সব পুজোর বৃত্তান্ত পুরাণে পুঁথিতে ঠাঁই পেয়ে যায়।


রবিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৩

মহারাজ প্রতাপাদিত্য - সত্যচরণ শাস্ত্রী

এ পোড়া দেশের মানুষ সুদূর ভারত প্রান্তের রাজপুত বীর রাণা প্রতাপ সম্পর্কে যতটা জানেন, ঠিক তার বিপরীত অবস্থা বাংলার ঘরের ছেলে প্রতাপাদিত্যের বেলায়। বাংলার স্বদেশপ্রেমী, বীর যোদ্ধা প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে খুব কমই আলোচনা হয়েছে। কেবলমাত্র বঙ্গের দ্বাদশ ভৌমিক বা বারো ভূঁইয়া আলোচনার প্রসঙ্গে ঈশা খাঁ, কেদার রায, প্রতাপাদিত্যের নামোল্লেখের মধ্য দিয়েই বঙ্গীয় বিদ্যার্থীকুলের ইতিহাস জ্ঞানের রূপরেখা সমাপ্ত হয়। আসলে এর মূলে বোধ হয় বাঙালীদিগের নিজেদের ইতিহাস রচনায় উদাসীনতা ও সাহেব-সুবো বিদেশীগণের ইতিহাস পাঠান্তে এক ধরনের আত্মতৃপ্তির ঢেকুর কর্মযজ্ঞ। উপনিবেশিক শিক্ষার যা ফলাফল। আজও তা ফলে চলেছে। আমরা আর কবে সাবালক কব ?

বঙ্গের বীর প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আজও রচিত হয়নি। তাঁর এবং নিজ অনুচর বিভিন্ন নিম্নবর্গীয় ও প্রান্তবাসী বঙ্গীয় সেনানীগণের বাহুবল, বুদ্ধিমত্তা ও রণকৌশল আজও আমাদের গর্বের বিষয়। তিনি সুদীর্ঘ সময় না হলেও নাতিদীর্ঘ সময় ধরে বাংলায় স্বাধীন রাজত্ব চালিয়েছিলেন। বহিরাগত মোগলের পরাক্রম ও দাসত্বের শৃঙ্খল অবলম্বন স্বাধীনচেতা প্রতাপের পক্ষে কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। এর জন্য প্রথমে মোগল দরবারে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা ও কৌশল শিক্ষা করেন। পরে ধাপে ধাপে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। যা হোক, ঘরশত্রু বিভীষণের মতো ‘চামে কাটা’ ভবানন্দ মজুমদার ও অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্ত ও বেইমানী শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিপন্ন করে তোলে। কিন্তু বঙ্গদেশের স্বাধীনতার রক্ষায় পুত্র সহ প্রতাপের জীবন দান বাঙালীর অহংকারস্বরূপ।

শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৩

কোরক নজরুল সংখ্যা - (বইমেলা ১৪০৫)-সম্পাদক -তাপস ভৌমিক

নজরুল ইসলাম রবীন্দ্র পরিমণ্ডলের বাইরে একটা স্বাধীন-স্বকীয় ঘরানা তৈরি করেছিলেন— যা আগে সেইভাবে ছিল না। যাবতীয় সৃষ্টি ও কর্মের মধ্যে তিনি একটা প্রাণের গতিবেগ এনেছিলেন। অপরিসীম দুঃখ- দারিদ্র ও আঘাতের মধ্যেও এক অখণ্ড জাতীয়তাবাদের মন্ত্রকে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর সাহিত্য দর্শন, সংগীত তত্ত্ব ও ধারাবাহিক আপোষহীন জীবন-সংগ্রাম সহজে অনুকরণ করা যায় না। আমাদের দুর্ভাগ্য, তাঁর রচনার বৈশিষ্ট্য নতুনতার সন্ধানে বাঁক নেবার মুহূর্তেই তিনি মৌন হয়ে গেলেন। পৃথিবীব্যাপী ঘোর দুর্দিন, বিপর্যয়, গভীর সংকটের স্পর্শ তিনি জীবিত থেকেও পেলেন না। তার স্বল্প সময়ের সচল-জীবনে সাহিত্য ও সংগীত সাধনায় তিনি যে কালজয়ী সম্পদ রেখে গেছেন, তাকে নানা পর্বে মূল্যায়নের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। নজরুল-বিষয়ে গতানুগতিক ব্যাখ্যা, পুনর্মুদ্রণের হিড়িক যতটা সম্ভব পরিহার করে নতুন দৃষ্টিকোণে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই বিশেষ সংখ্যায়। এই সংখ্যায় পাঠক, জন্মশতবর্ষে কিছুটা অবহেলিত, এই উদার, সংস্কারমুক্ত মানুষটির সৃষ্টিসন্তার বিষয়ে অনুসন্ধানী বিশ্লেষণ পাবেন, তাঁকে পূর্ণাঙ্গভাবে চিনতে-জানতে পারবেন।

শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৩

বিলুপ্ত রাজধানী - উৎপল চক্রবর্তী

 'বাঙ্গালার ইতিহাস চাই, নহিলে বাঙ্গালার ভরসা নাই।'— এমন একটি আশঙ্কার পাশাপাশি এক কর্তব্যের আহ্বানও জানিয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্র, সে ইতিহাস 'তুমি লিখিবে, আমি লিখিব, সকলে লিখিবে, যে বাঙ্গালী তাহাকেই লিখিতে হইবে।' বঙ্কিম মননে উদ্ভাসিত এই সত্যের স্পষ্ট নির্দেশের প্রেরণায় বাঙালির এক কৃত্যসূচী হিসেবে রচিত হয়েছে এই গ্রন্থ। গঙ্গে থেকে মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত প্রতিটি জনপদ কেমন ছিল, কেন সেই গৌরব অস্তমিত হল, এখন তাঁর রূপটি কেমন - তার বিবরণ রয়েছে আলোচ্য গ্রন্থে। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় একজন ঐতিহাসিকের অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি দিয়ে, পর্যটকের নিরপেক্ষ অভিব্যক্তি নিয়ে, একজন কবির প্রাণবান আবেগকে শিল্পীর সৌন্দর্য-চেতনায় মন্ডিত করে সরস ও রম্যভাষায় পরিবেশন করেছেন লেখক, যার নজির বাংলা সাহিত্যে বিরল। বাংলা যাদের মুখের ভাষা বুকের রুধির, এদেশ যাঁদের গর্ব, এ মাটি যাঁদের কাছে সোনা – সেই স্বদেশপ্রীতির এক অনন্য দলিল এই গ্রন্থ।