এ পোড়া দেশের মানুষ সুদূর ভারত প্রান্তের রাজপুত বীর রাণা প্রতাপ সম্পর্কে যতটা জানেন, ঠিক তার বিপরীত অবস্থা বাংলার ঘরের ছেলে প্রতাপাদিত্যের বেলায়। বাংলার স্বদেশপ্রেমী, বীর যোদ্ধা প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে খুব কমই আলোচনা হয়েছে। কেবলমাত্র বঙ্গের দ্বাদশ ভৌমিক বা বারো ভূঁইয়া আলোচনার প্রসঙ্গে ঈশা খাঁ, কেদার রায, প্রতাপাদিত্যের নামোল্লেখের মধ্য দিয়েই বঙ্গীয় বিদ্যার্থীকুলের ইতিহাস জ্ঞানের রূপরেখা সমাপ্ত হয়। আসলে এর মূলে বোধ হয় বাঙালীদিগের নিজেদের ইতিহাস রচনায় উদাসীনতা ও সাহেব-সুবো বিদেশীগণের ইতিহাস পাঠান্তে এক ধরনের আত্মতৃপ্তির ঢেকুর কর্মযজ্ঞ। উপনিবেশিক শিক্ষার যা ফলাফল। আজও তা ফলে চলেছে। আমরা আর কবে সাবালক কব ?
বঙ্গের বীর প্রতাপাদিত্য সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আজও রচিত হয়নি। তাঁর এবং নিজ অনুচর বিভিন্ন নিম্নবর্গীয় ও প্রান্তবাসী বঙ্গীয় সেনানীগণের বাহুবল, বুদ্ধিমত্তা ও রণকৌশল আজও আমাদের গর্বের বিষয়। তিনি সুদীর্ঘ সময় না হলেও নাতিদীর্ঘ সময় ধরে বাংলায় স্বাধীন রাজত্ব চালিয়েছিলেন। বহিরাগত মোগলের পরাক্রম ও দাসত্বের শৃঙ্খল অবলম্বন স্বাধীনচেতা প্রতাপের পক্ষে কখনোই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। এর জন্য প্রথমে মোগল দরবারে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতা ও কৌশল শিক্ষা করেন। পরে ধাপে ধাপে নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। যা হোক, ঘরশত্রু বিভীষণের মতো ‘চামে কাটা’ ভবানন্দ মজুমদার ও অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকদের চক্রান্ত ও বেইমানী শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিপন্ন করে তোলে। কিন্তু বঙ্গদেশের স্বাধীনতার রক্ষায় পুত্র সহ প্রতাপের জীবন দান বাঙালীর অহংকারস্বরূপ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন