বাংলাভাষায় ‘মেলা' শব্দটির অর্থগত বিভিন্নতা সত্ত্বেও প্রায় সবকটি বিকল্প অর্থ আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের উদ্দিষ্ট অর্থটির সঙ্গে কোনো-না-কোনোভাবে সমার্থক ও সহায়ক হয়ে ওঠে :
বিশেষ কোনো উৎসব উপলক্ষে কোনো স্থানে বহুমানুষের সমাবেশ, সভা- সমাজ, প্রদর্শনী, স্বল্প সময়ের জন্য কেনাবেচার বাজার, মিলে যাওয়া, মিশে যাওয়া, মিলবিশিষ্ট হওয়া, উন্মীলিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি; কিংবা যাত্রা করা। ‘মেলা’-র সঙ্গে অর্থগুলির একটি ভাবগত তাৎপর্যের সাযুজ্য তৈরি হয়ে যায় । সবক্ষেত্রে যেমন হয়, এখানেও তেমনি, আভিধানিক অর্থ অপেক্ষা এখানে মেলা সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণাই বেশি কার্যকর, সন্দেহ নেই।
‘মেলা’ সামাজিক ক্রিয়ারই ফল। সমাজের যেমন ভিত্তি আছে, মেলারও তেমনি একটি সামাজিক ভিত্তি আছে। একবিংশ শতকে পৌঁছে মেলার সামাজিক ভিত্তিভূমিটির অনুসন্ধানের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে হয় ৷ একটা সময় পর্যন্ত বাংলার সমস্ত মেলারই পেছনে ছিল ধর্মীয় প্রেরণা । কিন্তু কোনো কালেই মেলার একমাত্র ভিত্তি ধর্ম ছিল না, ছিল অর্থনীতি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধর্মের প্রেরণা ও অর্থনীতির চাহিদার বহুলাংশে গোত্রান্তর ঘটেছে। এক সময় গ্রামীণ (এমন-কী মুষ্টিমেয় শহুরে মেলাও) মেলা ছিল বাৎসরিক পণ্য বিপণনের কেন্দ্র। যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতা, চাহিদার স্বল্পতা, দারিদ্র্য, ভোগ্যপণ্য বন্টন-ব্যবস্থার অনুপস্থিতি ইত্যাকার নানান কারণে মেলাই ছিল সাংসারিক, দৈনন্দিন—এমন কী আবশ্যিক পণ্যসংগ্রহের একমাত্র জায়গা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন