সম্প্রতি বাংলার ভেষজ বা বনৌষধির ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং চাষবাস নিয়ে ব্যাপক প্রচার এবং সম্প্রসারণ অভিযান চলছে। একদিকে হল বাংলার ভেষজকে বাঁচাতে হবে। অন্যদিকে হল প্রাকৃতিক ভেষজশালা থেকে পরীক্ষিত ভেষজগুলিকে বাছাই করে, গ্রামবাংলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা পদ্ধতিতে যুক্ত করতে হবে। প্রথম দিকটির উদ্যোগ, আয়োজন সম্প্রসারণে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার প্রাচুর্য রয়েছে। রাজ্যগুলিও উন্মুখ। তবে দ্বিতীয়টি এখনও উপেক্ষিত। সবই ভাসাভাসা। কোন্ গাছ কী কাজে লাগবে, তা না হয় বোঝা গেল। প্রথম প্রশ্ন প্রয়োগবিধি কী, দ্বিতীয় প্রশ্ন গাছটি কোথায় পাব? তৃতীয় প্রশ্ন গাছটি কি আমাদের আঙ্গিনায় হতে পারে? এই সব প্রশ্নের বোঝা নিয়ে এই পুস্তিকা। তবে সবকটি নয়, মূলত প্রথমটি। দ্বিতীয় প্রশ্নটির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। ভবিষ্যতে পছন্দের গাছ তাঁরা পৌঁছে দেবেন গ্রামগঞ্জের মানুষের দুয়ারে। জানিয়ে দেবেন চাষপদ্ধতি। উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ ও রাজ্যের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং অপ্রচলিত বিভাগের যৌথ প্রকল্পে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) হিসাব কষে দেখেছেন পৃথিবীর শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ তাদের স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রকৃতি নির্ভর। এদের বিশ্বাস প্রাকৃতিক ভেষজশালা থেকে সঠিক ভেষজ বা ভেষজসমষ্টি সংগ্রহ করে উপসর্গভিত্তিক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে ওদের প্রয়োগে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। এই ভিত্তি গড়ে উঠেছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। সাধারণভাবে এই ভিত্তিটি সীমাবদ্ধ ছিল বিশিষ্ট পরিবারের গণ্ডীর মধ্যে। কোথাও কবিরাজ, কোথাও বদ্যি, কোথাও বা হাকিম। সময়ের বিবর্তনে এই ভিত্তিতে ভাঙ্গন ধরেছে। চর্চার অভাব, কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্তি, যথার্থ ভেষজের বিলুপ্তি ইত্যাদিতে স্বাস্থ্যে লৌকিক প্রযুক্তিটি বিপন্ন। অথচ এই প্রযুক্তিই হল গ্রামবাংলার তথা বিশ্ব-গ্রামের দারিদ্র্য সীমার কাছাকাছি বা নীচে পড়ে থাকা মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষার একমাত্র কবচ। পৃথিবীর জ্ঞানীগুণীরা বক্তৃতা প্রসঙ্গে এই কবচের কথা বললেও কোনও দেশই এই কবচটিকে বিজ্ঞানে শোধন করে লৌকিক স্বাস্থ্যবিধিতে যুক্ত করার উদ্যোগ গড়ে ভুলতে পারে নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন