বাংলা ভাষায় বঙ্গ ও বঙ্গবাসী নিয়ে আলোচনা ও সেই সংক্রান্ত ই-বুকের সংগ্রহালয়ে আপনাকে স্বাগত। ইতিহাস থেকে ভ্রমণ, সমাজ, সংস্কৃতি , প্রকৃতি, পরিবেশ নিয়ে যা কিছু বাংলার তাই আমাদের আলোচ্য। আমাদের ব্লগে আপনার যাত্রা শুভ হোক।

শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪

কথা নিয়ে খেলা - শঙ্খ ঘোষ

অনেক বছর আগে ‘আনন্দমেলা' পত্রিকার জন্য একটা ধারাবাহিক লেখা লিখেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। ‘কুন্তক' ছদ্মনামে তখন বানান নিয়ে কিছু কথাবার্তা বলেছিলেন ছোটোদের জন্য গল্পচ্ছলে । তারপর শুরু হয়েছিল ওই একই ধাঁচে লেখা অন্য একটি প্রসঙ্গ : কবিতার অলংকার। উপমা রূপক অপহ্নুতি অতিশয়োক্তির মতো কথা-সাজানোর নানারকম মজা নিয়ে সেই লেখা।

বানান-বিষয়ের টুকরোগুলি ‘শব্দ নিয়ে খেলা' নামে গ্রন্থবদ্ধ হয়েছিল। যে-কোনো কারণেই হোক, ছোটোদের হাতে বইটি তেমনভাবে পৌঁছতে পারেনি। অলংকার-কথার এই হাল্কা লেখাগুলি নিয়ে বই করবার আর গরজ হয়নি তাই, যদিও প্রায় একযুগ ধরেই প্রকাশক আর শুভার্থীদের তাড়না ছিল অবিরাম। অনেকরকমের দ্বিধা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত বইটি প্রকাশ করেন সাহিত্যিক।


বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

জ্যোতির্বিজ্ঞানী রাধাগোবিন্দ - রণতোষ চক্রবর্তী

কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা বিদেশী ডিগ্রী দূরের কথা, কলেজের পড়াশুনা থেকেও বঞ্চিত, সরকারী অফিসের পনের টাকা মাইনের সামান্য একজন কেরানি রাধাগোবিন্দ চন্দ্র এ-যুগের জ্যোতির্বিজ্ঞানচর্চায় ভারতের অন্যতম পথিকৃৎ । যথার্থই তিনি ছিলেন সুদূরের পিয়াসী। ছোট্ট এক গ্রামে বসবাস করে সখ্য স্থাপন করতে চেয়েছিলেন শত-শত আলোকবর্ষ দূরের তারাদের সঙ্গে । মহাকাশের অগণিত তারা হয়ে উঠেছিল ওঁর বন্ধু—এমন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যে সাগরের ওপারের অনেকে ওঁর কাছ থেকে জানতে চাইতেন সেই সব তারাদের সম্পর্কে খোঁজখবর । কিন্তু প্রথাগত শিক্ষা তো প্রায় না-থাকার মত, অর্থসামর্থ্যও তথৈবচ—অসাধ্যসাধন করলেন কি করে ? ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে যার মর্মার্থ হল, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় । ওঁর ক্ষেত্রে সেই প্রবাদটাই সত্যি হয়েছিল। কেননা ইচ্ছা ছাড়া ওঁর তো আর কোনও সম্বলই ছিল না। অবশ্য ইচ্ছাটা ছিল আবাল্য ও সুতীব্র । 



রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিদ্যাসাগর - শঙ্খ ঘোষ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা নবজাগরণের একজন পুরোধা। শারীরিক আকারে ছোট্টখাট্টো এই মানুষটি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, সাহসী, কর্মঠ, দৃঢ় এবং অত্যন্ত দয়ালু একজন বেক্তিত্ব। মেরুদন্ড সোজা রেখে চলা এই মানুষটি অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপোষ করেননি। আজও তাই তিনি সকলের প্রণম্য। 

আজকের দিনে যখন সততার অভাব, দুর্নীতি, অন্যায় সমাজের ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন বিদ্যাসাগর মশায়ের এই ছোট্ট জীবনীটি মানুষকে আশার আলো দেখাবে এই আশা রাখি। 

গত ৯ আগস্ট আর জি কর মেডিকেল কলেজে ঘটে যাওয়া নৃশংস অপরাধ সমাজের একটি অংশের বিপুল লোভ, লালসা, দুর্নীতির আবরণ উন্মোচন করেছে। এই অপরাধীরা আমাদের সমাজেরই অংশ তাই সমাজে ঘটা যেকোনো ঘটনার জন্য অল্পবিস্তর হলেও আমরা সকলেই দায়ী। একজন প্রতিভাবান মানুষ শহীদ হয়ে আমাদের বুঝিয়েছেন এই ফাঁক গুলো। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে একজোট হয়েছে। 

তদন্ত, আইন, আদালত, সরকারি পদক্ষেপ, বিচার এগুলো সবই অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। দেরি হয়, দেরি করাও হয় ইচ্ছাকৃত। কিন্তু আমরা যেন তাঁকে ভুলে না যাই। 

বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪

বঙ্গ মূলনিবাসী একটি জনগোষ্ঠী - ড: উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস

‘বঙ্গ’ থেকে ‘বাঙালী' শব্দটি এসেছে যাতে একটি জনগোষ্ঠী বোঝায়। ‘বঙ্গ’ জনগোষ্ঠী থেকে ‘বঙ্গদেশ' হয়েছে। এভাবেই বঙ্গ থেকে সৃষ্টি হয়েছে বেঙ্গলা, বাঙ্গালাহ, বঙ্গালা, বঙ্গালী, বঙ্গোপসাগর, বেঙ্গল, পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ এখনও চালু।

ঐতরেয় আরণ্যকে প্রথম 'বঙ্গ' শব্দের ব্যবহার পাই। এতে জনগণ বোঝানো হয়েছে। এই ‘বঙ্গদের বংশধররা নমঃশূদ্র। বিভিন্ন তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে।

আমরা সুস্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আধুনিক বিজ্ঞান জাত, জাতি এবং বর্ণ ইত্যাদি বিশ্বাস করে না। আমরা একই মানবগোষ্ঠীর। ব্রাহ্মণদের নিজেদের মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য অনেক বেশি। অন্যদিকে ব্রাহ্মণ ও অব্রাহ্মণদের মধ্যে বিশেষ কোনও genetic ব্যবধান নেই।

ভারতে জাতব্যবস্থা একটা বড় ব্যবসায়। পৃথিবীব্যাপী ওয়েবসাইট ইনটারনেট ইত্যাদি থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী এখানকার জাতব্যবস্থার ঠাসবুনানি। জাতে ওঠা বা জাত পরিচিতি সবচেয়ে বড়গুণ যার মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা, চাকুরী, ব্যবসায়, ক্ষমতা, খ্যাতি এবং সব ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা লাভ করা যায়।

রাজনৈতিক নেতারা এই জাতের ছত্র-ছাড়পত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে। নিম্নবর্গীয় জাতি নিচু হতেই থাকে আর নেতারা এসব কাজে লাগিয়ে ছাতি ফুলায়। জাতি বা সম্প্রদায়-এর নামে এদেশে দুর্নীতি আর অনগ্রসরতা বাসা বেঁধে আছে। বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে দুর্বল শ্রেণী ও সংখ্যালঘু জনগণকে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কব্জি করে রাখে।

Genome বিজ্ঞান জাতি, জাত এবং বর্ণকে করেছে নস্যাৎ। এসব কি আমরা শুনবো? মানবো? বিজ্ঞান জাত-পাঁত ভেঙ্গেছে কিন্তু সমাজ ভয়াবহ ঔদ্ধত্যে এবং প্রতিরোধে এই জাতব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখছে। সারাবিশ্বে নতুন এক ‘জাতিবাদ’ চালু হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ উদার হবার ভড়ং দেখালেও আসলে ভারতের অন্যান্য প্রাদেশিক রাজ্যের মতো এখানেও জাত-পাতের বিচার জোরদার বহাল।                    



মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

বাংলার ঔষধি গাছ -শঙ্কর মুখোপাধ্যায় (সম্পাদক )

সম্প্রতি বাংলার ভেষজ বা বনৌষধির ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং চাষবাস নিয়ে ব্যাপক প্রচার এবং সম্প্রসারণ অভিযান চলছে। একদিকে হল বাংলার ভেষজকে বাঁচাতে হবে। অন্যদিকে হল প্রাকৃতিক ভেষজশালা থেকে পরীক্ষিত ভেষজগুলিকে বাছাই করে, গ্রামবাংলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা পদ্ধতিতে যুক্ত করতে হবে। প্রথম দিকটির উদ্যোগ, আয়োজন সম্প্রসারণে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার প্রাচুর্য রয়েছে। রাজ্যগুলিও উন্মুখ। তবে দ্বিতীয়টি এখনও উপেক্ষিত। সবই ভাসাভাসা। কোন্ গাছ কী কাজে লাগবে, তা না হয় বোঝা গেল। প্রথম প্রশ্ন প্রয়োগবিধি কী, দ্বিতীয় প্রশ্ন গাছটি কোথায় পাব? তৃতীয় প্রশ্ন গাছটি কি আমাদের আঙ্গিনায় হতে পারে? এই সব প্রশ্নের বোঝা নিয়ে এই পুস্তিকা। তবে সবকটি নয়, মূলত প্রথমটি। দ্বিতীয় প্রশ্নটির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। ভবিষ্যতে পছন্দের গাছ তাঁরা পৌঁছে দেবেন গ্রামগঞ্জের মানুষের দুয়ারে। জানিয়ে দেবেন চাষপদ্ধতি। উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ ও রাজ্যের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং অপ্রচলিত বিভাগের যৌথ প্রকল্পে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) হিসাব কষে দেখেছেন পৃথিবীর শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ তাদের স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রকৃতি নির্ভর। এদের বিশ্বাস প্রাকৃতিক ভেষজশালা থেকে সঠিক ভেষজ বা ভেষজসমষ্টি সংগ্রহ করে উপসর্গভিত্তিক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে ওদের প্রয়োগে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। এই ভিত্তি গড়ে উঠেছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। সাধারণভাবে এই ভিত্তিটি সীমাবদ্ধ ছিল বিশিষ্ট পরিবারের গণ্ডীর মধ্যে। কোথাও কবিরাজ, কোথাও বদ্যি, কোথাও বা হাকিম। সময়ের বিবর্তনে এই ভিত্তিতে ভাঙ্গন ধরেছে। চর্চার অভাব, কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্তি, যথার্থ ভেষজের বিলুপ্তি ইত্যাদিতে স্বাস্থ্যে লৌকিক প্রযুক্তিটি বিপন্ন। অথচ এই প্রযুক্তিই হল গ্রামবাংলার তথা বিশ্ব-গ্রামের দারিদ্র্য সীমার কাছাকাছি বা নীচে পড়ে থাকা মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষার একমাত্র কবচ। পৃথিবীর জ্ঞানীগুণীরা বক্তৃতা প্রসঙ্গে এই কবচের কথা বললেও কোনও দেশই এই কবচটিকে বিজ্ঞানে শোধন করে লৌকিক স্বাস্থ্যবিধিতে যুক্ত করার উদ্যোগ গড়ে ভুলতে পারে নি।