বাংলা ভাষায় বঙ্গ ও বঙ্গবাসী নিয়ে আলোচনা ও সেই সংক্রান্ত ই-বুকের সংগ্রহালয়ে আপনাকে স্বাগত। ইতিহাস থেকে ভ্রমণ, সমাজ, সংস্কৃতি , প্রকৃতি, পরিবেশ নিয়ে যা কিছু বাংলার তাই আমাদের আলোচ্য। আমাদের ব্লগে আপনার যাত্রা শুভ হোক।

রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিদ্যাসাগর - শঙ্খ ঘোষ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা নবজাগরণের একজন পুরোধা। শারীরিক আকারে ছোট্টখাট্টো এই মানুষটি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী, সাহসী, কর্মঠ, দৃঢ় এবং অত্যন্ত দয়ালু একজন বেক্তিত্ব। মেরুদন্ড সোজা রেখে চলা এই মানুষটি অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপোষ করেননি। আজও তাই তিনি সকলের প্রণম্য। 

আজকের দিনে যখন সততার অভাব, দুর্নীতি, অন্যায় সমাজের ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন বিদ্যাসাগর মশায়ের এই ছোট্ট জীবনীটি মানুষকে আশার আলো দেখাবে এই আশা রাখি। 

গত ৯ আগস্ট আর জি কর মেডিকেল কলেজে ঘটে যাওয়া নৃশংস অপরাধ সমাজের একটি অংশের বিপুল লোভ, লালসা, দুর্নীতির আবরণ উন্মোচন করেছে। এই অপরাধীরা আমাদের সমাজেরই অংশ তাই সমাজে ঘটা যেকোনো ঘটনার জন্য অল্পবিস্তর হলেও আমরা সকলেই দায়ী। একজন প্রতিভাবান মানুষ শহীদ হয়ে আমাদের বুঝিয়েছেন এই ফাঁক গুলো। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে একজোট হয়েছে। 

তদন্ত, আইন, আদালত, সরকারি পদক্ষেপ, বিচার এগুলো সবই অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। দেরি হয়, দেরি করাও হয় ইচ্ছাকৃত। কিন্তু আমরা যেন তাঁকে ভুলে না যাই। 

বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪

বঙ্গ মূলনিবাসী একটি জনগোষ্ঠী - ড: উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস

‘বঙ্গ’ থেকে ‘বাঙালী' শব্দটি এসেছে যাতে একটি জনগোষ্ঠী বোঝায়। ‘বঙ্গ’ জনগোষ্ঠী থেকে ‘বঙ্গদেশ' হয়েছে। এভাবেই বঙ্গ থেকে সৃষ্টি হয়েছে বেঙ্গলা, বাঙ্গালাহ, বঙ্গালা, বঙ্গালী, বঙ্গোপসাগর, বেঙ্গল, পূর্ববঙ্গ, পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গ এখনও চালু।

ঐতরেয় আরণ্যকে প্রথম 'বঙ্গ' শব্দের ব্যবহার পাই। এতে জনগণ বোঝানো হয়েছে। এই ‘বঙ্গদের বংশধররা নমঃশূদ্র। বিভিন্ন তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে।

আমরা সুস্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আধুনিক বিজ্ঞান জাত, জাতি এবং বর্ণ ইত্যাদি বিশ্বাস করে না। আমরা একই মানবগোষ্ঠীর। ব্রাহ্মণদের নিজেদের মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য অনেক বেশি। অন্যদিকে ব্রাহ্মণ ও অব্রাহ্মণদের মধ্যে বিশেষ কোনও genetic ব্যবধান নেই।

ভারতে জাতব্যবস্থা একটা বড় ব্যবসায়। পৃথিবীব্যাপী ওয়েবসাইট ইনটারনেট ইত্যাদি থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী এখানকার জাতব্যবস্থার ঠাসবুনানি। জাতে ওঠা বা জাত পরিচিতি সবচেয়ে বড়গুণ যার মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা, চাকুরী, ব্যবসায়, ক্ষমতা, খ্যাতি এবং সব ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা লাভ করা যায়।

রাজনৈতিক নেতারা এই জাতের ছত্র-ছাড়পত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে। নিম্নবর্গীয় জাতি নিচু হতেই থাকে আর নেতারা এসব কাজে লাগিয়ে ছাতি ফুলায়। জাতি বা সম্প্রদায়-এর নামে এদেশে দুর্নীতি আর অনগ্রসরতা বাসা বেঁধে আছে। বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যে দুর্বল শ্রেণী ও সংখ্যালঘু জনগণকে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কব্জি করে রাখে।

Genome বিজ্ঞান জাতি, জাত এবং বর্ণকে করেছে নস্যাৎ। এসব কি আমরা শুনবো? মানবো? বিজ্ঞান জাত-পাঁত ভেঙ্গেছে কিন্তু সমাজ ভয়াবহ ঔদ্ধত্যে এবং প্রতিরোধে এই জাতব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখছে। সারাবিশ্বে নতুন এক ‘জাতিবাদ’ চালু হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গ উদার হবার ভড়ং দেখালেও আসলে ভারতের অন্যান্য প্রাদেশিক রাজ্যের মতো এখানেও জাত-পাতের বিচার জোরদার বহাল।                    



মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

বাংলার ঔষধি গাছ -শঙ্কর মুখোপাধ্যায় (সম্পাদক )

সম্প্রতি বাংলার ভেষজ বা বনৌষধির ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং চাষবাস নিয়ে ব্যাপক প্রচার এবং সম্প্রসারণ অভিযান চলছে। একদিকে হল বাংলার ভেষজকে বাঁচাতে হবে। অন্যদিকে হল প্রাকৃতিক ভেষজশালা থেকে পরীক্ষিত ভেষজগুলিকে বাছাই করে, গ্রামবাংলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষা পদ্ধতিতে যুক্ত করতে হবে। প্রথম দিকটির উদ্যোগ, আয়োজন সম্প্রসারণে কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার প্রাচুর্য রয়েছে। রাজ্যগুলিও উন্মুখ। তবে দ্বিতীয়টি এখনও উপেক্ষিত। সবই ভাসাভাসা। কোন্ গাছ কী কাজে লাগবে, তা না হয় বোঝা গেল। প্রথম প্রশ্ন প্রয়োগবিধি কী, দ্বিতীয় প্রশ্ন গাছটি কোথায় পাব? তৃতীয় প্রশ্ন গাছটি কি আমাদের আঙ্গিনায় হতে পারে? এই সব প্রশ্নের বোঝা নিয়ে এই পুস্তিকা। তবে সবকটি নয়, মূলত প্রথমটি। দ্বিতীয় প্রশ্নটির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। ভবিষ্যতে পছন্দের গাছ তাঁরা পৌঁছে দেবেন গ্রামগঞ্জের মানুষের দুয়ারে। জানিয়ে দেবেন চাষপদ্ধতি। উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ ও রাজ্যের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং অপ্রচলিত বিভাগের যৌথ প্রকল্পে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) হিসাব কষে দেখেছেন পৃথিবীর শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ তাদের স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রকৃতি নির্ভর। এদের বিশ্বাস প্রাকৃতিক ভেষজশালা থেকে সঠিক ভেষজ বা ভেষজসমষ্টি সংগ্রহ করে উপসর্গভিত্তিক রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে ওদের প্রয়োগে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। এই ভিত্তি গড়ে উঠেছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। সাধারণভাবে এই ভিত্তিটি সীমাবদ্ধ ছিল বিশিষ্ট পরিবারের গণ্ডীর মধ্যে। কোথাও কবিরাজ, কোথাও বদ্যি, কোথাও বা হাকিম। সময়ের বিবর্তনে এই ভিত্তিতে ভাঙ্গন ধরেছে। চর্চার অভাব, কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্তি, যথার্থ ভেষজের বিলুপ্তি ইত্যাদিতে স্বাস্থ্যে লৌকিক প্রযুক্তিটি বিপন্ন। অথচ এই প্রযুক্তিই হল গ্রামবাংলার তথা বিশ্ব-গ্রামের দারিদ্র্য সীমার কাছাকাছি বা নীচে পড়ে থাকা মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যরক্ষার একমাত্র কবচ। পৃথিবীর জ্ঞানীগুণীরা বক্তৃতা প্রসঙ্গে এই কবচের কথা বললেও কোনও দেশই এই কবচটিকে বিজ্ঞানে শোধন করে লৌকিক স্বাস্থ্যবিধিতে যুক্ত করার উদ্যোগ গড়ে ভুলতে পারে নি।


সোমবার, ১৭ জুন, ২০২৪

লোকঔষধ ও লোকচিকিৎসা - বরুণকুমার চক্রবর্তী

লোকঔষধ ‘Folk Medicine'-এর আক্ষরিক অনুবাদ। কিন্তু প্রশ্ন হল 'লোক- ঔষধ' বলতে কি বোঝায়? মানুষ জনের ব্যবহার্য যে ঔষধ তাই লোকঔষধ নয় কি? একথা ঠিকই যে ঔষধ কেবল মানুষেরই ব্যবহার্য নয়, মনুষ্যেতর প্রাণীর ব্যবহার্য ঔষধ যেমন আছে, তেমনি গাছপালা কৃষিজ শস্য এদের জন্যও ঔষধ আছে। তবে নিঃসন্দেহে জগতে মানুষের রোগভোগই বেশি, কেননা তা চোখে পড়ে সহজে, জানা যায় সহজে। আর পশু কিংবা গাছপালার রোগ নিরাময়ের জন্য পশু কিংবা গাছপালার মানুষের মত দুশ্চিন্তা নেই, এদের রোগ নিরাময়ে সীমিত ক্ষেত্রে হলেও মানুষই মূলত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এরই দৃষ্টান্ত পশু হাসপাতাল।

পশু বা গাছপালার জীবন রক্ষার তুলনায় মানুষের জীবন রক্ষার, রোগ নিরাময়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। মানুষের আছে সৃষ্টির ক্ষমতা, মানুষের আছে সহানুভূতি আর আছে দায়িত্ববোধ, তাই পীড়িত মানুষকে নিরাময় করে তুলতে মানুষের আগ্রহের ও চেষ্টার অন্ত নেই। এই চেষ্টা থেকে এক সম্পূর্ণ নূতন বিদ্যাশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান বা Medical Science



শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪

কোচবিহার কিছুকথা কিছু ইতিহাস - শোভেন সান্যাল

এটা অত্যন্ত দুঃখের কথা যে পুরাতাত্ত্বিক ঐশ্বর্যের বিচারে পশ্চিমবঙ্গে কোচবিহার জেলার যে গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল কোচবিহার তা পায়নি। অথচ বাংলার ইতিহাসের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্মৃতিচিহ্ন কোচবিহার জেলার পথে প্রান্তরে অত্যন্ত অবহেলার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে আর নিঃশব্দে ঘোষণা করে চলেছে যে আত্মবিস্মৃত বাঙালিজাতির কোনও ইতিহাসবোধ নেই।

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের শুধু এই উক্তিই নয়, তার দেবী চৌধুরানী উপন্যাসও বহু লোকে পড়েছেন। কিন্তু অনেকেই মনে রাখেননি স্বামী পরিত্যক্তা অসহায়া গ্রাম্য তরুণী প্রফুল্লর দেবী চৌধুরানীতে রূপান্তরের নেপথ্য ইতিহাস। প্রফুল্ল যদি পোড়ো বাড়িতে মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ বৈষ্ণবের আবিষ্কৃত রাজা নীলাম্বরের গুপ্তধনের উত্তরাধিকারী না হত তাহলে তার সোনার মোহর ভাঙানোর দরকার হত না। আর তাহলে তার ভবানী পাঠকের সাহায্য লাভের দরকারও হত কিনা সন্দেহ। আর ভবানী পাঠককে এভাবে দরকার না হলে প্রফুল্লর দেবী চৌধুরানীতে রূপান্তরও এভাবে হত না।

এ তো গেল প্রফুল্লর কথা। কিন্তু এই যে রাজা নীলাম্বরের কথা বঙ্কিমচন্দ্র লিখে গেছেন, তিনি কে, সে সম্বন্ধে বাঙালি পাঠকেরা বিশেষ কেউই উৎসাহ বোধ করেন না। কারণ তাকেও তারা অনেকেই উপন্যাসের কাল্পনিক চরিত্র বলেই মনে করেন। অথচ রাজা নীলাম্বর রীতিমতো এক ঐতিহাসিক চরিত্র, আর সাহিত্য সম্রাট তা শুধু জানতেনই না, তার রাজধানী কামতাপুরেরও খোঁজ খবর রাখতেন তিনি। সেই কামতাপুর নগর সম্বন্ধে তিনি কী বলেছেন তা তার ভাষাতেই দেখা যাক এখানে।

“ইহার পরিধি ৯১/২ ক্রোশ, অতএব নগরী অতি বৃহৎ ছিল সন্দেহ নাই। ইহার মধ্যে সাত ক্রোশ বেড়িয়া নগরীর প্রাচীর ছিল। আর ২১/২ ক্রোশ একটি নদীর দ্বারা রক্ষিত। প্রাচীরের ভিতর প্রাচীর; গড়ের ভিতর গড়— মধ্যে রাজপুরী।”

এই সুপ্রাচীন সুবৃহৎ কামতাপুর শহর কোথায়, উত্তরবঙ্গে বাস করেও অনেকেই তা জানেন না। কোচবিহার শহর থেকে দিনহাটা মহকুমা শহরের প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিমে এখনকার গোঁসানিমারি গ্রামটি এই প্রাচীন কামতাপুর শহরের প্রধান স্থান।