নাটক ও চলচ্চিত্র জগতের যশস্বী ব্যক্তিত্ব তুলসী লাহিড়ীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশের কথা ছিল। বাংলা সাহিত্যের আর একজন গুণী মানুষ প্রয়াত বিজিতকুমার দত্ত অসুস্থ শরীরেও গ্রন্থটি লেখার কাজ শেষ করেছিলেন।
কিছু কিছু অভিধা বহু ব্যবহারে তার মূল দ্যোতনা হারায়। ‘বহুমুখী প্রতিভা' এমনই একটা জৌলুস হারানো বিশেষণ। অপাত্রে অপ্রয়োজনে ব্যবহৃত হতে হতে ক্রমশ ম্রিয়মান এই শব্দবন্ধ প্রকৃত অর্থে যাঁদের নামের আগে প্রযুক্ত হতে পারে তেমনই একজন তুলসী লাহিড়ী। সুরকার - গীতিকার-পরিচালক-নাট্যকার-অভিনেতা তুলসী লাহিড়ী।
শৈশব থেকেই সংগীতের প্রতি তুলসী লাহিড়ীর ঝোঁক ছিল। এর পিছনে মূল প্রেরণা ছিলেন পিতা সুরেন্দ্রচন্দ্র (মতান্তরে, সুরেন্দ্রনাথ)। মঞ্চের সঙ্গে তুলসী লাহিড়ীর প্রথম যোগাযোগের সূত্রও এই সংগীত। ১৯২৮-৩৪ সালের মধ্যে তিনি গ্রামোফোন কোম্পানির জন্য অজস্র গান লেখেন ও সুর দেন। মোটামুটি হিসাবে তুলসীবাবুর প্রায় ২০০টি গান ওই কোম্পানি রেকর্ড করে। তিনি বাংলা খেয়াল, ঠুংরি, পল্লিগীতি, বিজয়া-আগমনী, ভক্তিমূলক গান, কৌতুকগীতি ইত্যাদি লিখেছেন ও সুরারোপ করেছেন। মূলত রাগাশ্রয়ী গানের প্রতি তাঁর টান ছিল। জমিরুদ্দিন খাঁ-র মতো সে সময়ের বিখ্যাত ওস্তাদ গাইয়ে ও বড়ো বড়ো সংগীতবিদ্রা তুলসীবাবুর গুণগ্রাহী ছিলেন ও তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন।
তুলসী লাহিড়ী নাটকের জগতে পাকাপাকিভাবে আসেন ১৯৪০-৪১ সালে। মন্বন্তর আর দেশভাগের বেদনাবহ স্মৃতি তুলসী লাহিড়ীর রচনায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। মনুষ্যত্বের অমর্যাদা তাঁকে পীড়িত করেছে। তাঁর অধিকাংশ নাটকের নাটকের মেরুদণ্ডই হচ্ছে --- জীবনযুদ্ধই বেঁচে থাকার ধর্ম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন